সপ্তাহে স্ত্রীর সাথে কতবার মিলিত হওয়া যায়
সপ্তাহে স্ত্রীর সাথে কতবার মিলিত হওয়া যায়, তা আসলে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও দম্পতির পারস্পরিক ইচ্ছা, শারীরিক সামর্থ্য এবং সম্পর্কের সুস্থতা অনুযায়ী নির্ভর করে। সাধারণভাবে:
স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর বিবাহিত সম্পর্কে সপ্তাহে ১-৩ বার সহবাসকে স্বাভাবিক ধরা হয়।
যদি দুজনের ইচ্ছা ও শারীরিক সামর্থ্য থাকে, তাহলে তার চেয়েও বেশি মিলন করলেও কোনো সমস্যা নেই।
তবে অতিরিক্ত সহবাসে ক্লান্তি, বিরক্তি, বা শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে – তাই ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
স্ত্রীর সাথে সহবাস বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য, ইসলামিক নির্দেশনা ও সম্পর্ক উন্নয়ন – এই তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিচ্ছি:
---
১. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা দৃষ্টিকোণ থেকে:
স্বাভাবিকতা:
গবেষণা অনুযায়ী, বিবাহিত দম্পতিরা গড়ভাবে সপ্তাহে ১-৩ বার সহবাস করে থাকে।
এটা বয়স, শারীরিক সুস্থতা, মানসিক অবস্থা এবং সম্পর্কের গভীরতার ওপর নির্ভর করে।
উপকারিতা:
রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মানসিক চাপ (স্ট্রেস) ও উদ্বেগ কমায়।
ঘুম ভালো হয়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
দম্পতির মাঝে ভালোবাসা ও আবেগ বৃদ্ধি পায়।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত সহবাস করলে শারীরিক ক্লান্তি, যৌন অস্বস্তি বা যৌনাঙ্গে সমস্যা হতে পারে।
শরীর বা মন ভালো না লাগলে চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়।
নারীর ঋতুস্রাবের সময় সহবাস না করাই উত্তম, কারণ এতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
---
২. ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে:
সহবাসের অনুমোদন:
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সহবাসকে হালাল এবং সাওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
হাদীসে বলা হয়েছে, সহবাস করাও সদকার সমতুল্য, যদি তা হালাল পথে হয় (মুসলিম: ১০০৬)।
কতবার সহবাস করা উচিত?
কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারিত নেই। তবে স্ত্রীর অধিকার হলো, স্বামী যেন তার যৌন চাহিদা পূরণ করে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের কেউ যেন স্ত্রীকে পানির মতো না ফেলে রেখে আসে (অর্থাৎ দ্রুত শেষ করে চলে না যায়), বরং তার চাহিদাও পূর্ণ করে।" (মিশকাত)
নিষিদ্ধ সময়সমূহ:
ঋতুস্রাব ও নিফাসকালীন সহবাস হারাম (সূরা বাকারা: ২২২)।
রোজা অবস্থায় দিনব্যাপী সহবাস হারাম।
হাজ্জের ইহরামের সময় সহবাস নিষিদ্ধ।
আদব বা শিষ্টাচার:
সহবাসের আগে "বিসমিল্লাহ" সহকারে দোয়া পড়া সুন্নত (যাতে শয়তান সন্তান থেকে দূরে থাকে)।
আলাপ ও ভালোবাসার মাধ্যমে স্ত্রীকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা উচিত।
পারস্পরিক সম্মতিতে সহবাস হওয়া জরুরি।
---
৩. সম্পর্ক উন্নয়নের দিক থেকে:
সহবাস মানে শুধু শারীরিক সম্পর্ক নয়। এতে রয়েছে:
আবেগ, ভালোবাসা ও মানসিক ঘনিষ্ঠতা।
স্ত্রীর অনুভূতি বোঝা এবং গুরুত্ব দেওয়া।
কথা বলা, সান্নিধ্য, সময় কাটানো – সব মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সহবাসের মাধ্যমে:
ঝগড়া-বিবাদ কমে, মান-অভিমান দূর হয়।
আত্মিক সম্পর্ক গভীর হয়।
দুইজনের মাঝে বিশ্বাস ও নিরাপত্তাবোধ বাড়ে।
পারস্পরিক সম্মতি সবচেয়ে জরুরি:
একপক্ষ আগ্রহী, আরেক পক্ষ যদি মানসিক বা শারীরিকভাবে প্রস্তুত না থাকে, তাহলে তা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
তাই একে অপরের চাহিদা, সীমাবদ্ধতা ও অনুভূতির প্রতি সম্মান থাকা জরুরি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:
পারস্পরিক সম্মতি, ইচ্ছা ও মানসিক সংযোগ বজায় রাখা। কোনো একপক্ষ চাপে থাকলে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু হলে, তা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
Comments
Post a Comment