স্বামী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে স্ত্রীর করণীয় কি?
স্বামী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে স্ত্রীর করণীয় কি?
বিয়ের সম্পর্ক বিশ্বাস আর ভালোবাসার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু যখন এই বিশ্বাসে ফাটল ধরে, তখন সেটা খুবই কষ্টদায়ক। স্বামীর পরকীয়া স্ত্রীকে মানসিক, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। তবুও আবেগে ভেসে না গিয়ে বাস্তবতাকে বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নিচে দেওয়া ৭টি টিপস স্ত্রীর জন্য গাইডলাইন হিসেবে কাজ করতে পারে।
১. নিজেকে সময় দিন ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
যখন স্বামীর পরকীয়া ধরা পড়ে, তখন আবেগে ভেঙে পড়া স্বাভাবিক। তবে হঠাৎ সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। নিজের ভেতরে অনুভূতি গুছিয়ে নিন এবং আবেগের চেয়ে যুক্তিকে গুরুত্ব দিন। সন্তান, পরিবার এবং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে চিন্তা করুন। এই সময় কিছুটা একা থাকা, আত্মমর্যাদা নিয়ে ভাবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য ধরলে আপনি অনেক বেশি শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
২. খোলামেলা ও শান্তভাবে স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন
চিৎকার, কান্নাকাটি বা দোষারোপে কোনো সমাধান হয় না। বরং একটা নিরিবিলি সময় বেছে নিয়ে, শান্তভাবে স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন। জানতে চান তার এমন আচরণের পেছনের কারণ কী ছিল। আপনার ব্যথা, কষ্ট ও অনুভূতি খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করুন। তার দৃষ্টিভঙ্গিও মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় কথোপকথন অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রাখুন
পরকীয়া কখনোই স্ত্রীর দোষে হয় না, বরং সেটা স্বামীর নৈতিক বিচ্যুতি। তাই নিজেকে ছোট মনে করবেন না এবং নিজেকে দোষারোপ করবেন না। আপনার মূল্য, সম্মান ও আত্মবিশ্বাস অটুট রাখুন। নিজেকে গুছিয়ে তুলুন—চেহারা, মন ও চিন্তাভাবনায়। আত্মমর্যাদার ওপর দাঁড়িয়ে আপনার অবস্থান পরিষ্কার করুন। মানুষ তখনই সম্মান পায়, যখন সে নিজেকে সম্মান দিতে জানে।
৪. পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সহায়তা নিন
সব বিষয় সবাইকে বলা ঠিক নয়, তবে একজন বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু বা বড় কারো সঙ্গে শেয়ার করলে মানসিক ভার হালকা হয়। তারা আপনাকে পরিস্থিতি বুঝতে সহায়তা করতে পারে। বিশেষ করে যারা অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান, তাদের উপদেশ বাস্তবসম্মত হয়। প্রয়োজনে পরিবারের কারো মাধ্যমে স্বামীকে বোঝানো যেতে পারে। একা সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেয়ে সহযোগিতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বেশি কার্যকর হয়। তবে কাকে বলছেন, সেটা বেছে নিন বুঝেশুনে।
৫. স্বামীর আচরণে পরিবর্তনের ইচ্ছা আছে কি না দেখুন
কিছু মানুষ ভুল করে, অনুতপ্ত হয় এবং ফিরে আসতে চায়। আবার কেউ কেউ নিজের কাজকে সঠিক মনে করে চলে যায় আরও গভীরে। তাই বুঝে নিতে হবে, স্বামী আপনার প্রতি আন্তরিক কি না। সে যদি সত্যিই অনুতপ্ত হয় এবং সম্পর্ক বাঁচাতে চায়, তবে তাকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে যদি সে দম্ভ দেখায়, দায় স্বীকার না করে বা পরিবর্তনের ইচ্ছা না দেখায়, তবে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুইজনের ইচ্ছাই জরুরি।
৬. নিজের আর্থিক স্বাধীনতা ও দক্ষতা বাড়ান
আপনার যদি কোনো উপার্জন না থাকে, তবে নিজেকে স্বাবলম্বী করার কথা ভাবুন। চাকরি, অনলাইন কাজ, হস্তশিল্প—যেকোনো কিছু শুরু করতে পারেন। এটি আপনাকে শুধু আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও শক্তি দেবে। নিজের আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে, আপনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় থাকবেন। প্রয়োজনে সন্তান নিয়ে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও টিকে থাকার সাহস পাবেন। নারী যতই স্বাধীন হয়, ততই নিজের সম্মান রক্ষা করতে পারে।
৭. সম্পর্ক রাখবেন নাকি ছাড়বেন—সিদ্ধান্ত সময় নিয়ে নিন
পরকীয়ার পর সম্পর্ক রাখবেন কিনা, সেটা খুবই জটিল সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে আবেগ নয়, যুক্তি ও বাস্তবতা বিবেচনা করুন। স্বামী সত্যিই অনুতপ্ত কি না, পরিবারের অবস্থা, সন্তানের ভবিষ্যৎ—সব দিক দেখুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সহায়তা নিন। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নিন, তাতে ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে। মনে রাখবেন, সম্পর্ক রাখা যেমন সম্মানজনক, তেমনি প্রয়োজনে ছাড়াও সাহসিকতার পরিচয়।
পরকীয়ার মতো কঠিন পরিস্থিতি একজন নারীর জীবনকে এলোমেলো করে দিতে পারে। তবে দুর্বল না হয়ে ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা ও আত্মসম্মান নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব। আবেগ নয়, বাস্তবতা ও স্বচ্ছ চিন্তাভাবনা এই সময়ের সঠিক পথপ্রদর্শক। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সময় নেওয়া এবং নিজের অবস্থান স্পষ্ট করাই সবচেয়ে জরুরি। একজন নারীর শক্তিই পারে তার ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে।
Comments
Post a Comment